বাংলার কিংবদন্তি সত্যজিৎ
সত্যজিৎ রায়, বাংলার কিংবদন্তি
আজ যার সম্পর্ক বলতে চলেছি সে আর কেউ নয় একজন অতি স্মরণীয় মানুষ যার কথা বললে অনেক কম বলা হবে। তিনি সত্যজিৎ রায়, এযুগের পরম বিস্ময়।
তিনি বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্র জগতের প্রবাদ পুরুষ। বাংলা চলচ্চিত্রের বিপুল সম্ভাবনার দ্বার যেমন তিনি খুলে দিয়েছেন তেমনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
- উত্তর কলকাতার বিখ্যাত রায়চৌধুরী পরিবারের 1921 সালের 2মে রবিবার সত্যজিৎ রায়ের জন্ম হয়। পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং পিতার সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অমর স্রষ্টা। সুকুমার রায় ও সুপ্রভাত এর একমাত্র সন্তান সত্যজিৎ রায়ের ছোটবেলার নাম ছিল প্রসাদ। পাঁচ বছর বয়সেই তার পিতা মারা যান। তারপর তার মা তাকে নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার বকুল বাগান রোড ভাই পি কে দাস এর বাড়ি চলে আসে। সত্যজিতের ডাকনাম ছিল মানিক।
সত্যজিৎ রায় |
শিক্ষাজীবন
- 1928 সালে মায়ের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের গিয়ে প্রথম রবীন্দ্রনাথকে দেখেন সত্যজিৎ রায়। রবীন্দ্রনাথ তাকে 'বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে' কবিতা টি লিখে উপহার দিয়েছিলেন। 1930 সালে সত্যজিৎ রায় বালিগঞ্জ গভমেন্ট স্কুলে ভর্তি হন। 1939 সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর তিনি শিল্পশিক্ষার জন্য শান্তিনিকেতনে যান। সেখানে শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় কে তিনি শিক্ষাগুরু হিসেবে পান। এখানেই প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতি সত্যজিতের গভীর অনুরাগ জন্মায়। পরবর্তীকালে তিনি বলেছিলেন যে, শান্তিনিকেতনে না গেলে তিনি পথের পাঁচালী করতে পারতেন না।
কর্মজীবন
- 1943 সালে তিনি বিখ্যাত বিজ্ঞাপন কোম্পানি ডি জে কিমারে চাকরি নেন। পরে এই কোম্পানির আর্ট ডিরেক্টরের পদে উন্নীত হন। এই সময় তিনি বিভিন্ন গ্রন্থের প্রচ্ছদ অঙ্কন এবং অলংকরণের অসাধারণ নৈপুণ্য এর পরিচয় দেন। 1965 তে দিল্লির অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রচ্ছদ প্রদর্শনীতে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। 1963 সালে ক্যামেরায় ছবি তুলে 'বয়েজ ওন পেপার' পুরস্কার লাভ করেন।
চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ রায়ের অবদান
- বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্রে রূপায়িত করেছিলেন। তার শিল্পীর চোখ এবং সাহিত্যিক ভাবনার মিশ্রণে তার প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী অত্যন্ত উচ্চ মানের রচনায় পরিণত হয়। সারাবিশ্বে অঢেল প্রশংসা পেতে থাকে সত্যজিৎ রায়। এই ছবিটি প্রকৃতির মাধুর্য, অপু দুর্গার শৈশব জীবন, দুঃখ দারিদ্রের সাথে জীবনের সংগ্রাম বাংলা চলচ্চিত্র কে এক নতুন দিশা দেখায়। এরপর অপরাজিত, অপুর সংসার, দেবী, তিনকন্যা, অভিযান , জলসাঘর, চারুলতা, অশনি সংকেত, গুপি গাইন বাঘা বাইন এর মত অসাধারণ চলচ্চিত্র সৃষ্টি করেন।
সাহিত্য জগতে সত্যজিৎ রায়ের ভূমিকা
- সত্যজিৎ রায় বংশের ধারা অনুযায়ী সাহিত্যপ্রতিভার উত্তরাধিকার নিয়ে জন্ম নিয়েছিলেন। সাহিত্য জগতের নিজস্ব প্রতিভা রেখেছিলেন সত্যজিৎ রায়। তার এক ডজন গপ্পো, আরো এক ডজন, আরো বারো, বাদশাহী আংটি, সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তার সৃষ্ট ফেলুদা চরিত্র বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র। তার কল্পবিজ্ঞান বাহিনীর প্রধান চরিত্র প্রফেসর শঙ্কু বাংলা শিশু কিশোর সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কিশোর চরিত্র।
পুরস্কার ও সন্মান প্রাপ্তি
Oscar award 🏆 |
- ডিলিট উপাধি
- দাদাসাহেব ফালকে সন্মান
- ভারতরত্ন ইত্যাদি উপাধি তে তিনি সন্মানিত হন।
1992 সালে 23 এপ্রিল সত্যজিৎ রায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
___________________________________________________________________________________________
ধন্যবাদ 🙂🙂
Comments
Post a Comment